(হৃদয় ছোঁয়া একটা গল্প , মিস করবেন না )
"লাল জামা, নীল অশ্রু ও অন্যান্য..."
লিখেছেনঃNandita Paul Nitu

...
"লাল জামা, নীল অশ্রু ও অন্যান্য..."
লিখেছেনঃNandita Paul Nitu

...
১।
-"এই খালি, যাবা?"
-"কই যাবেন, আফা?"
-"ফার্মগেট"।
ফুটফুটে টুকটুকে একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে এক মহিলা রিক্সায় উঠলো। ফুটফুটে বাচ্চাটার মুখের দিকে চেয়ে নিজের মেয়ে তুলতুলের কথা মনে পড়ে হামিদের। ভোর সকালে রিক্সা নিয়ে বের হবার সময় মেয়ের ঘুমন্ত মুখটা দেখে বেরিয়ে আসে সে। আটমাস বয়সী তুলতুলের ঘুমন্ত মুখখানা বড় বেশী পবিত্র লাগে তার।
রিক্সা চালাতে চালাতে আনমনে রিক্সায় বসা মহিলার কথা শুনে হামিদ। নিজের মেয়েটার জন্য মনটা ছটফট করে। রাতে ফিরতে অনেক দেরী হয় হামিদের। ততক্ষণে তুলতুল ঘুমিয়ে পড়ে। যেদিন জেগে থাকে, সেদিন আধো আধো মিষ্টি কণ্ঠে "বাব্বা" বলে ডাকে। হাত বাড়িয়ে দেয় কোলে উঠার জন্য। কঠিন পৃথিবীটাও তখন স্বর্গীয় লাগে হামিদের।
আজ বাড়ি ফিরে হামিদের মন ভীষণ খুশিতে ভরে যায়। তুলতুল জেগে আছে। মায়ের কোলে বসেই তুলতুল আদুরে গলায় "বাব্বা" ডেকে হাত বাড়িয়ে দেয় হামিদের দিকে। মেয়েকে কোলে নিয়ে বুকে চেপে ধরে হামিদ। মেয়ের কোমল শরীরে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নেয়। কেমন যেন পবিত্র শিশুসূলভ ঘ্রাণ পায়। মেয়েকে আদরে আদরে ভরিয়ে দেয় হামিদ। মেয়ের হাসিমুখ দেখতে দেখতে হামিদ ভাবে, তুলতুলকে এই ঈদে একটা লাল টুকটুকে জামা কিনে দেবে। সেই জামা পরে তার মেয়েটা এদিক ওদিক হামাগুড়ি দিয়ে বেড়াবে। একটু একটু হাঁটতে শিখেছে তুলতুল। ঘরের বেড়ায় হাত দিয়ে দিয়ে কিছুদূর হাঁটতে চেষ্টা করে। বেড়া ছেড়ে দিলেই ধপ করে পড়ে যায়। তখন নিজে নিজেই জোরে হেসে উঠে। আর থাবা দেয় মাটিতে। একটু একটু কথাও বলে, "বাব্বা", "মাম্মা", কাক দেখলে বলে "কা"। দেখতেও ভারি মিষ্টি। তুলতুলের চেহারা দেখে মায়ায় মনটা ভরে যায় হামিদের।
২।
ঈদের আর মাত্র একদিন বাকি। মনটা আজ বেশ খুশি হামিদের। বেশ কিছু টাকা জমেছে হাতে। তা দিয়ে তুলতুলের জন্য একটা টুকটুকে লাল জামা কিনবে সে আজ। গুনগুন করে গান গাইছে আর রিক্সা চালাচ্ছে সে।
জামা পছন্দ করতে একটু সময় লেগে যায়, দামটাও একটু বেশি পড়েছে। তবুও অখুশি নয় হামিদ। মালিকের কাছে রিক্সা জমা দিয়ে ফিরতে আজ বেশ দেরি হয় তার। ফেরার পথে, মেয়েটাকে লাল জামায় কত্তো সুন্দর লাগবে, তা ভেবেই আনন্দের চোখে পানি আসে তার।
বস্তির ঘরের সামনে এসেই জোরে ডাকে হামিদ, "আমার তুলতুল সোনা কই রে?"
আজ উত্তর আসে না। ঘরে ঢুকে হামিদ দেখে, তুলতুলের গায়ে প্রবল জ্বর। ছটফট করছে মেয়ে। বন্ধ চোখের পাতা দু'টো তিরতির করে কাঁপছে। ফর্সা গাল দু'টো লালচে দেখাচ্ছে। জ্বরের ঘোরে "বাব্বা" বলে ডেকে উঠলো তুলতুল। পাশে বসা তুলতুলের মা ডুকরে কেঁদে উঠে।
নিস্তব্ধ রাতেই তুলতুলকে নিয়ে হামিদ ও তার স্ত্রী ছুটে যায় হাসপাতালে। হাতের জমানো টাকার অনেকটাই আজ খরচ হয়ে গেছে, তবু মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করায় হামিদ। সারারাত মেয়েকে বুকে আগলে রাখে। তবু জ্বর কমে না তুলতুলের। ভোর হতেই রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে হামিদ। তাকে যে মেয়ের ওষুধের টাকা জোগাড় করতেই হবে।
সারাদিন রিক্সা চালানো শেষে মালিকের কাছে ফিরছে হামিদ। যে ক'টা টাকা পেয়েছে, তা দিয়ে ওষুধ কিনেই হাসপাতালে ছুটবে সে। কাল ঈদ, তার আগেই মেয়েকে সুস্থ দেখতে চায় হামিদ।
মোড়টা ঘুরলেই গ্যারেজটা দেখা যাবে। এমন সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটা দামি পাজারো জীপ ধাক্কা দেয় হামিদের রিক্সাকে। না, হামিদের তেমন কিছু হয় না। তবে রিক্সাটা দুমড়ে মুচড়ে যায়। সেই সাথে দুমড়ে যায় হামিদের আশাও।
৩।
রিক্তহস্তে হাসপাতালের পথে রওনা হয় হামিদ। মেয়ের ওষুধের জন্য টাকা আনতে পারেনি সে। রিক্সা মেরামতের খরচ স্বরূপ হামিদের আজকের আয় করা সব টাকা রেখে দেয় মালিক। অনেক আকুতি, মিনতি করে, অশ্রু ঝরিয়েও লাভ হয়নি। একটা টাকাও পায়নি সে।
মাথা নিচু করে হাসপাতালে ঢুকে হামিদ। মেয়ের বিছানার পাশে বসে পড়ে চুপ করে। মেয়ের জ্বর আরো বেড়েছে। ছটফট করছে তুলতুল। পাশে বসে তুলতুলের মা ও হামিদ। সমস্ত পৃথিবী নিশ্চুপ।
৪।
ঈদের দিন। ভোর হতেই সবার আনন্দের মেলা শুরু। শুধু হামিদ তুলতুলের ছোট্ট দেহটা বুকে জড়িয়ে চুপ করে বসে থাকে হাসপাতালের বাইরে। তুলতুলকে আজ লাল জামাটা পরিয়েছে সে। কি যে সুন্দর দেখাচ্ছে তার মেয়েটাকে!
তুলতুল আর কোনোদিন "বাব্বা" বলে ডাকবে না। কোনোদিন হাঁটার চেষ্টা করে পড়ে গেলে হেসে উঠবে না। তাতে কি? হামিদ মেয়েকে বুকে জড়িয়ে রাখবে তবুও। ব্যর্থ বাবা সে।
মেয়ের শোকে নির্বাক হয়ে যাওয়া হামিদ মুখের ভাষায় এই সমাজকে ধিক্কার দিতে পারে না ঠিকই, কিন্তু অশ্রুহীন চোখে তার প্রবল ঘৃণা।
আরো দেখুন-"এই খালি, যাবা?"
-"কই যাবেন, আফা?"
-"ফার্মগেট"।
ফুটফুটে টুকটুকে একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে এক মহিলা রিক্সায় উঠলো। ফুটফুটে বাচ্চাটার মুখের দিকে চেয়ে নিজের মেয়ে তুলতুলের কথা মনে পড়ে হামিদের। ভোর সকালে রিক্সা নিয়ে বের হবার সময় মেয়ের ঘুমন্ত মুখটা দেখে বেরিয়ে আসে সে। আটমাস বয়সী তুলতুলের ঘুমন্ত মুখখানা বড় বেশী পবিত্র লাগে তার।
রিক্সা চালাতে চালাতে আনমনে রিক্সায় বসা মহিলার কথা শুনে হামিদ। নিজের মেয়েটার জন্য মনটা ছটফট করে। রাতে ফিরতে অনেক দেরী হয় হামিদের। ততক্ষণে তুলতুল ঘুমিয়ে পড়ে। যেদিন জেগে থাকে, সেদিন আধো আধো মিষ্টি কণ্ঠে "বাব্বা" বলে ডাকে। হাত বাড়িয়ে দেয় কোলে উঠার জন্য। কঠিন পৃথিবীটাও তখন স্বর্গীয় লাগে হামিদের।
আজ বাড়ি ফিরে হামিদের মন ভীষণ খুশিতে ভরে যায়। তুলতুল জেগে আছে। মায়ের কোলে বসেই তুলতুল আদুরে গলায় "বাব্বা" ডেকে হাত বাড়িয়ে দেয় হামিদের দিকে। মেয়েকে কোলে নিয়ে বুকে চেপে ধরে হামিদ। মেয়ের কোমল শরীরে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নেয়। কেমন যেন পবিত্র শিশুসূলভ ঘ্রাণ পায়। মেয়েকে আদরে আদরে ভরিয়ে দেয় হামিদ। মেয়ের হাসিমুখ দেখতে দেখতে হামিদ ভাবে, তুলতুলকে এই ঈদে একটা লাল টুকটুকে জামা কিনে দেবে। সেই জামা পরে তার মেয়েটা এদিক ওদিক হামাগুড়ি দিয়ে বেড়াবে। একটু একটু হাঁটতে শিখেছে তুলতুল। ঘরের বেড়ায় হাত দিয়ে দিয়ে কিছুদূর হাঁটতে চেষ্টা করে। বেড়া ছেড়ে দিলেই ধপ করে পড়ে যায়। তখন নিজে নিজেই জোরে হেসে উঠে। আর থাবা দেয় মাটিতে। একটু একটু কথাও বলে, "বাব্বা", "মাম্মা", কাক দেখলে বলে "কা"। দেখতেও ভারি মিষ্টি। তুলতুলের চেহারা দেখে মায়ায় মনটা ভরে যায় হামিদের।
২।
ঈদের আর মাত্র একদিন বাকি। মনটা আজ বেশ খুশি হামিদের। বেশ কিছু টাকা জমেছে হাতে। তা দিয়ে তুলতুলের জন্য একটা টুকটুকে লাল জামা কিনবে সে আজ। গুনগুন করে গান গাইছে আর রিক্সা চালাচ্ছে সে।
জামা পছন্দ করতে একটু সময় লেগে যায়, দামটাও একটু বেশি পড়েছে। তবুও অখুশি নয় হামিদ। মালিকের কাছে রিক্সা জমা দিয়ে ফিরতে আজ বেশ দেরি হয় তার। ফেরার পথে, মেয়েটাকে লাল জামায় কত্তো সুন্দর লাগবে, তা ভেবেই আনন্দের চোখে পানি আসে তার।
বস্তির ঘরের সামনে এসেই জোরে ডাকে হামিদ, "আমার তুলতুল সোনা কই রে?"
আজ উত্তর আসে না। ঘরে ঢুকে হামিদ দেখে, তুলতুলের গায়ে প্রবল জ্বর। ছটফট করছে মেয়ে। বন্ধ চোখের পাতা দু'টো তিরতির করে কাঁপছে। ফর্সা গাল দু'টো লালচে দেখাচ্ছে। জ্বরের ঘোরে "বাব্বা" বলে ডেকে উঠলো তুলতুল। পাশে বসা তুলতুলের মা ডুকরে কেঁদে উঠে।
নিস্তব্ধ রাতেই তুলতুলকে নিয়ে হামিদ ও তার স্ত্রী ছুটে যায় হাসপাতালে। হাতের জমানো টাকার অনেকটাই আজ খরচ হয়ে গেছে, তবু মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করায় হামিদ। সারারাত মেয়েকে বুকে আগলে রাখে। তবু জ্বর কমে না তুলতুলের। ভোর হতেই রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে হামিদ। তাকে যে মেয়ের ওষুধের টাকা জোগাড় করতেই হবে।
সারাদিন রিক্সা চালানো শেষে মালিকের কাছে ফিরছে হামিদ। যে ক'টা টাকা পেয়েছে, তা দিয়ে ওষুধ কিনেই হাসপাতালে ছুটবে সে। কাল ঈদ, তার আগেই মেয়েকে সুস্থ দেখতে চায় হামিদ।
মোড়টা ঘুরলেই গ্যারেজটা দেখা যাবে। এমন সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটা দামি পাজারো জীপ ধাক্কা দেয় হামিদের রিক্সাকে। না, হামিদের তেমন কিছু হয় না। তবে রিক্সাটা দুমড়ে মুচড়ে যায়। সেই সাথে দুমড়ে যায় হামিদের আশাও।
৩।
রিক্তহস্তে হাসপাতালের পথে রওনা হয় হামিদ। মেয়ের ওষুধের জন্য টাকা আনতে পারেনি সে। রিক্সা মেরামতের খরচ স্বরূপ হামিদের আজকের আয় করা সব টাকা রেখে দেয় মালিক। অনেক আকুতি, মিনতি করে, অশ্রু ঝরিয়েও লাভ হয়নি। একটা টাকাও পায়নি সে।
মাথা নিচু করে হাসপাতালে ঢুকে হামিদ। মেয়ের বিছানার পাশে বসে পড়ে চুপ করে। মেয়ের জ্বর আরো বেড়েছে। ছটফট করছে তুলতুল। পাশে বসে তুলতুলের মা ও হামিদ। সমস্ত পৃথিবী নিশ্চুপ।
৪।
ঈদের দিন। ভোর হতেই সবার আনন্দের মেলা শুরু। শুধু হামিদ তুলতুলের ছোট্ট দেহটা বুকে জড়িয়ে চুপ করে বসে থাকে হাসপাতালের বাইরে। তুলতুলকে আজ লাল জামাটা পরিয়েছে সে। কি যে সুন্দর দেখাচ্ছে তার মেয়েটাকে!
তুলতুল আর কোনোদিন "বাব্বা" বলে ডাকবে না। কোনোদিন হাঁটার চেষ্টা করে পড়ে গেলে হেসে উঠবে না। তাতে কি? হামিদ মেয়েকে বুকে জড়িয়ে রাখবে তবুও। ব্যর্থ বাবা সে।
মেয়ের শোকে নির্বাক হয়ে যাওয়া হামিদ মুখের ভাষায় এই সমাজকে ধিক্কার দিতে পারে না ঠিকই, কিন্তু অশ্রুহীন চোখে তার প্রবল ঘৃণা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন