"তোমাকে ভালবাসি!!"
-আমি অনেক চেষ্টা করেছি তোমাকে ভুলের থাকার । কিন্তু পারি নি । ভুলে থাকতে পারছি না । আমি .... আমি তোমাকে ভালবাসি ... তয়া সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে । কেমন গভীর চোখে তাকিয়ে আছে । চারিদিক যেন থেমে গেছে । কেউ কোন কথা বলছে না । এমন কি একটা পাখি ডাকার আওয়াজও কানে আসছে না । এইবার তয়ার ডায়লগ বলার পালা । কিন্তু তয়া কোন কথা বলল না । কেবল তাকিয়েই রইল আমার দিকে । -কাট ! মিজান ভাইয়ের চিৎকারে বাস্তবে ফিরে এলাম । মিজান ভাই বলল -কি ব্যাপার তয়া ডায়লগ বলছো না কেন ? মিজান ভাইয়ের কথায় ও যেন বাস্তবে ফিরে এল । তয়া খানিকটা লজ্জা পেল । বলল -সরি মিজান ভাই । ভুলে গিয়েছিলাম । আর একবার প্লিজ ! -ওকে রিটেক ! লাইট ক্যামেরা এন্ড একশান .... আমি জানি তয়া ডায়লগ ভুলে যায় নি । ও আমার চোখের দিকে তাকিয়েছিল সরাসরি । আমি যে সত্যি সত্যিই কথাটা বলেছি ওটা তয়া বুঝতে পেরেছে । অন্তত ওর চোখ দেখেতো আমার তাই মনে হয়েছে । তাই ও হেসে উঠতে পারে নি । স্ক্রিপ্টে ছিল আমি ওকে কথা বলার পর ও হেসে উঠবে । কিন্তু ও হেসে উঠতে পারে নি । তয়া । মুমতাহিনা তয়া । একজন নাম করা মডেল । আমার রাজ্যের সম্রাজ্ঞী । তয়া আমি সেই ২০১০ সাল থেকেই চিনি । ও যখন প্রথম লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টারে প্রোগ্রামে অংশ নিল । প্রতিটা পর্ব আমি দেখেছিলাম কেবল ওকে একটা বার দেখার জন্য । মেয়েটাকে আমার এতো ভাল লেগে গেল যে চার পাশের অন্য সবাইকে কেমন ফিকে লাগতে লাগল । আর আজ সেই তয়ার সাথেই আমি অভিনয় করছি । কি অবিশ্বাষ্য !! এটা আমার ভাগ্যই বলতে হবে । মিজান ভাইয়ের সাথে আমার অনেক আগে থেকেই পরিচয় । আমাদের এলাকারই ছেলে । পড়াশুনার ফাকে ফাকে ওনার জন্য মাঝে সাঝে গল্পটল্প লিখে দিতাম । সেই সুবাদে পরিচয় । যে নাটকটার সুটিং চলছে সেটার গল্পও আমারই লেখা । নাটক শুরুর দিন কেন জানি মিজান ভাই আমাকে স্পটে আসতে বললেন । আমি ভাবলাম স্ক্রিপ্টে হয়তো কোন কিছু পরিবর্তন করাবে । কিন্তু এসে পরলাম বিপদে । মিজান ভাই বললেন -তুই তন্ময়ের রোলটা করবি ! -মানে কি ? আমি যেন আকাশ থেকে পরলাম । -আমি অভিনয়ের অ ও জানি না । আর আমি করবো অভিনয় ? আপনার কি মাথা খারাপ হয়েছে ? -শোন বেশি প্যাচাল পাড়বি না । তোর অভিনয় জানার দরকায় নাই । আমি যা করতে বলবো কেবল তাই করবি । যা এখন সামনে থেকে দুর হ ! আমি সামনে থেকে দুর হলাম । মিজান ভাই খানিকটা এক রোখা টাইপের । যা বলবেন তাই করবেন । প্যাকআপ হবার পর রাস্তায় দাড়িয়ে আছি শাহবাগ যাবো বলে এমন সময় দেখলাম লাল রংয়ের গাড়িটা আমার সামনে দাড়াল । আমি গাড়িটাকে চিনি । তয়ার গাড়ি এটা । পেছনের উইন্ড স্ক্রিনের গ্লাসটা নেমে গেল । তয়া মুখটা বের করে একটু হাসল । -কোথায় যাবেন সুমন ভাই । আমার হার্টবিট টা ততক্ষনে চরমে পৌছেছে । তবে এটা জিনিস দেখে ভাল লাগল যে তয়া চোখে আগের মত আর তাচ্ছিল্যের ভাবটা নেই । প্রথম যেদিন মিজান ভাই তয়ার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিল তয়া কেমন একটা তাছিল্য ভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়েছিল । অবশ্য তাকাবে না কেন ? সে এতো বড় একজন মডেল আর কোথাকার কে না কে ? সবাই কে পাত্তা দিতে গেলে কি আর চলে ! তবুও মনটা খানিকটা খারাপই হয়েছিল বইকি । নিজের পছন্দের মানুষগুলোর কাছ থেকে সামান্যতম অবহেলা বিশাল কষ্টের কারন । তবে আজ সত্যি তয়া চোখ দিকে তাকিয়ে খুবই ভাল লাগল । আমি খানিকটা সংকুচিত হয়ে বলল -এই শাহবাগের দিকে যাবো । -আসুন আমিও ঐ দিকেই যাচ্ছি । আপনাকে নামিয়ে দেই । আমি গাড়িতে উঠে বসলাম । গাড়ি চলতে শুরু করলে তয়া বলল -আপনি কি এই প্রথম অভিনয় করছেন ? -হুম । -এই প্রথম । -তবে অভিনয় বলবেন না এটাকে । -কেন ? -অভিনয় কি কিভাবে করে আমি জানি ই না । মিজাজ ভাই যা বলে আমি তাই করি । এটাকে অভিনয় বলা যায় না । -কিন্তু আজকে যেটা করলেন ওটাকে কি বলবেন ? -আজও আমি অভিনয় করিনি । -মানে? আমি এই প্রশ্নটার উত্তরে কেবল তয়ার দিকে তাকালাম । আবার সেরকম হল । দুজন যেন কিছুক্ষনের জন্য হারিয়ে গেলাম । তয়াই আগে চোখ সরিয়ে নিল বলল -মিজান ভাইয়ের কাছে শুনলাম আপনি নাকি খুব সুন্দর গল্প লেখেন । এই নাটকের গল্পটাও নাকি আপনার লেখা । -হুম । টুকটাক লিখি আর কি ! -তয়া কথা খুজে পেল না আর । আমি চুপ করে গেলাম । কি বলব কেমন করে বলবো বুঝতেই পারছিলাম না । আসলে স্বপ্নের মানুষগুলো যখন স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে সামনে চলে আসে তখন কোন কথাই আর খুজে পাওয়া যায় না বলার জন্য । হঠাৎ বললাম -আমি এখানে নেমে যাই । আসলে তয়ার পাশে বসে থাকতে কেমন একটা অস্বস্তি লাগছিল । তয়া বলল -সেকি এখনও তো শাহবাগ আসে নি । -না ঠিক আছে । হঠাৎ আর একটা কাজ মনে পড়ে গেল । -কোথায় যাবেন বলুন আমি নামিয়ে দেই । -না আর কষ্ট করার দরকার নেই । গাড়ি থেকে নেমে সোজা হাটা দিল । কোথায় নামলাম খ্যালও করলাম না । বহু চেষ্টা করলাম যে পেছন ফিরে তাকাবো না । কিন্তু তাকিয়েই ফেললাম । এবং যা আশা করেছিলাম তাই । তয়া গাড়ি থেকে নেমে এসেছে । আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ল । ওর চোখে কেমন বিষন্ন দৃষ্টি ! তয়ার এই বিষন্নতা কি আমার জন্য? নাটকের শুটিং চলল আরো কিছুদিন । দিনগুলো স্বপ্নের মত কেটে যেতে লাগল । তয়ার অভিনয় দেখতাম , ওর সাথে টুকটাক কথা বলতাম সত্যি এক স্বপ্নের মধ্যেই ছিলাম । কিন্তু স্বপ্ন ভাঙ্গে দেরি হল না । দেখতে দেখতে নাটকের কাজ শেষ হয়ে এল । শেষদিন যখন সবাই চলে গেছে তখনও আমি বসে বইলাম কিছুক্ষন । যেতে ইচ্ছা করছিল না । এখান থেকেই গেলেই তো স্বপ্নের জগত্ থেকে বের হয়ে বাস্তবে চলে যাবো । আর ওখানে তো আর মুমতাহিনা তয়া নেই । অন্ধকার হয়ে এল তবুও বসেই রইলাম । -ওহ ! আপনি আছেন এখনও যান নি ! -হুম । -ভাগ্যিস আছেন ! এই কথা বলতে বলতে তয়া আমার পাশে বসে পড়ল । হুম এখনও আছি । কেন জানি যেতে ইচ্ছা করছে না । -তা আপনি যান নি কেন ? আমি জানতে চাইলাম । -আপনার সাথে কয়েকটা কথা বলার ছিল । -আমার সাথে ? আমি খানিকটা পুলকিত হলাম । বললাম -বলুন । তয়া চট করেই কিছু বলল না । কিছুক্ষন চুপ থাকার পর বলল -আপনার সাথে কাজ করে ভাল লাগল । সামনে আশা কয়ি আরো কাজ করবো একসাথে । -নাহ । আর হবে না । -কেন ? আপনি অনেক ভাল অভিনয় করেন । আমি হাসলাম । বললাম -আপনি কি এই কথা বলতে এসেছিলাম ? তয়া চুপ করে রইল । আমি বললাম -তয়া আপনি যে কথা বলতে চেয়েছিলেন ওটা না না বলাই থাক । আমি খুব সাধারন একটা ছেলে । আমার বোঝা উচিত্ যে আমার স্বপ্ন গুলোও সাধারন হওয়া উচিত্ । -এমন ভাবে বলেন না প্লিজ । কাউকে পছন্দ করা নিশ্চয় অন্যায় না । -হয়তো অন্যায় না । কিন্তু ধরা ছোয়ার বাইরে কাউকে ভালবাসা অন্যায় ! এটা কেবল নিজেকে ইচ্ছা করে কষ্ট দেওয়া হয় ! -তয়া কি বলবে ভেবে পেল না । আমি জানি আমার জন্য ওর খারাপ লাগছে । কিংবা করুনা হচ্ছে । কিন্তু তাই ওর মত একটা নাম করা মডেলের নিশ্চই আমার প্রেমে পড়া মানায় না । জীবনটা বাংলা সিনেমা না নায়কের ভালবাসা দেখে নায়িকা সব কিছু ছেড়ে ছুড়ি দিয়ে চলে আসবে । -তয়া আপনি বেশি ভাববেন না প্লিজ । আমাকে নিয়ে এতো ভাবার কিছু নেই । -একটা রিকোয়েস্ট করবো ? -করুন । -আর হয়তো দেখা হবে না । আমি ইচ্ছা করেই আর আপনার সামনে আসবো না । দেখা হলেই সমস্যা । -কি সমস্যা ? -জীবন বাবুর কবিতা পড়েন নি ? কে হায় হৃদয় খুড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে ! তবে আমার কথা মনে রাখবেন, কেমন ? তয়া কিছু বলতে যাবে এমন কে যেন এসে হাজির হল । গাঢ় গলায় বলল -তুমি এখানে ! -এইতো তোমার জন্য ওয়েট করছি । শোন যার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য তোমাকে ডেকেছি এ সুমন আমার কো আর্টিষ্ট ? খুব ভাল অভিনয় করে আর খুব ভাল গল্প লেখে ! আমি এতোক্ষন ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম । ছেলে না বলে যুবক বলাই ভাল । দেখতে খুবই সুদর্শন । তয়ার সাথে একেবারে পারফেক্ট ম্যাচ । এবার তয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল -সুমন ভাই এ শাপতাহিন ! আমার প্রিয়নসে । শাপতাহিন বেশ অদ্ভুদ নাম । আমার সাথে সৌজন্য সাক্ষাত শেষে ওরা রওনা দিল । আমি দাড়িয়েই রইলাম । স্বপ্নের পৃথিবী থেকে বাস্তবে ফেরার সময় এসেছে । আমি তাকিয়ে তাকিয়ে তয়ার চলে যাওয়া দেখছি । বুকের ভিতর কেমন একটা চিনচিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে । মনে হচ্ছে আমার স্বপ্নের পৃথিবীটা আমার কাছ থেকে আস্তে আস্তে দুরে চলে যাচ্ছে । ঠিক এমন সময় তয়া পিছন ফিরে তাকাল । তয়ার চোখে কেমন যেন একটা বিষাদ দেখতে পেলাম । হয়তো বিষাদটা আমার জন্য , হয়তো বা না । আমার বুকের ভেতরকার ব্যাথাটা যেন আরও একটু বেশি চিনচিন করে উঠল !
|
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন