এই ব্লগটি সন্ধান করুন

বুধবার, ২০ জুন, ২০১২

বৃষ্টি ভেজা দিনগুলি.....



অঝোরধারায় কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে শুনলে মনের ভেতরে একটা চঞ্চল শিহরণ এখনো জেগে উঠে। মন চলে যায় অতীতের ফেলে আসা মধুর কিছু স্মৃতির মাঝে,যেখানে মিশে আছে আমার শৈশব আর কৈশরের বৃষ্টি ভেজা দিনগুলি।ব্লগে বেশ কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি নিয়ে অনেকের খুব সুন্দর সুন্দর লেখা পড়ছি।বাংলাদেশের মানুষেরা বৃষ্টির আনন্দ নিচ্ছে শুনে অজান্তেই নিজের মনটা কেমন যেন আনচান করে উঠলো।

আমার এইখানে বৃষ্টি হলেও বাংলাদেশের মত কালবৈশাখীর ঝড় এখনো দেখিনি। সেই ঝড় দেখার জন্য প্রাণটা যেন ছটফট করে উঠছে। ছোটবেলার অভ্যস বৈশাখ মাসে কালবৈশাখীর ঝড় না দেখলে যেন মন ভরে না...সারা আকাশ কালো করে চারিদিক স্তব্ধ হয়ে থাকে কিছুক্ষণ, তারপরে হঠাৎ করে ঠান্ডা দমকা বাতাস শুরু হয়, সেই ঠান্ডা বাতাসটা আমার অনেক প্রিয়...ভাবলে এখনো কত ভাল লাগে। আকাশটা গাঢ় ধূসর কালছে রঙের হয়ে গেলে ঢাকার সাদা সাদা বিল্ডিং গুলো আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠে। তখন মানুষজনের ছুটোছুটি, ময়লা, পলিথিন ব্যাগ আর নানা রকম জিনিষের উড়াউড়ি দেখতে অনেক ভাল লাগত আমাদের বাসার বারান্দা দিয়ে। রাতের বেলা যখন ঝড়ের জন্য ইলেক্ট্রিসিটি চলে যেত, আমরা অন্ধকারের মাঝে বসে থাকতাম আর অদ্ভুত একটা ভাল লাগাময় ভয় লাগতো মনে। জোরে জোরে আলোর ঝলকানি দিয়ে বিজলী চমকাতো আকাশে আর আমি তাড়াতাড়ি দুহাতে কান চেপে ধরতাম, মেঘের ঘর্ষণের বিকট শব্দটা যেন আমার প্রাণ প্রিয় আত্মাটাকে বাইরে বের না করে দেয় সেজন্য....

স্কুল কলেজের জীবনে মাঝে মাঝে এই ঝড় বৃষ্টিটা কে ভীতিকর মনে হতো আমার কাছে। যখনই স্কুল বা কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়েছি আর কিছুক্ষনের মধ্যে বের হবো, ওমনি বৃষ্টি শুরু। মেজাজটা যা খারাপ হতো, আমার আব্বু বলতো থাক আজকে আর যেতে হবে না, একা বাসায় বসে বসে বোর হতাম... কিন্তু একবার কলেজে চলে যেতে পারলে বৃষ্টির দিনের মজার শেষ থাকতো না। কত যে শয়তানি করতাম, কলেজের বারান্দায় আমরা বান্ধবীরা মিলে লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকতাম, বাতাসে বৃষ্টির পানির ঝাপটা এসে লাগতো শরীরে। আর কলেজ ছুটির সময় বৃষ্টি হলে তো না ভিজে বাড়িই যেতাম না। আমাদের কলেজটা ছিল বি.ডি.আর এর ভেতরে, বেশ সুন্দর ছিমছাম জায়গাটা। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বি.ডি.আর এর মেইন গেট পর্যন্ত এসে তারপরে রিকশায় করে বাসায় আসতাম... একবার কোচিং করতে গেছিলাম স্যারের বাসায়, পড়াও শেষ হয়েছে আর অনেক জোরে শুরু হয়েছে ঝড়। সবাই তাড়াহুড়া করে চলে গেছে আর আমি রয়ে গেছি একা, কারণ আমার আব্বু আসবে আমাকে নিতে। একা একা দাঁড়িয়ে আছি আর ভাবছি চলে যাব কিনা, ভাল লাগছিল না একা দাঁড়িয়ে থাকতে। এদিকে ঝড়ও কমছিল না, হঠাৎ দেখি আমার একটা বান্ধবী আর তার মা যাচ্ছে।আমিও তাদের সাথে রওনা দিলাম, অঝোরে বৃষ্টি ঝরেই যাচ্ছে আর রাস্তায় এক হাঁটু পানি জমে গেছে। ওরই মধ্যে আমরা রিকশাও পাচ্ছিলাম না, হেঁটে হেঁটে অনেকদূর এসে রিকশা পেয়ে বাসায় গেলাম। যেয়ে দেখি ততোক্ষণে আব্বু আমাকে আনতে চলে গেছে.... ভয়ে আমার জান শেষ, তখন মোবাইলের এত চল ছিল না, তাই আমাদের মোবাইলও ছিল না যে বলবো আমি বাসায় চলে এসেছি। আব্বুর টেনশনের কথা চিন্তা করে সেদিন অনেক ভয় পেয়েছিলাম। আব্বু কোচিং এ আমাকে না পেয়ে টেনশন করে স্যারকে সব বলাতে স্যারও চিন্তায় পড়ে গেছিল, বাসায় আসার পরে আব্বুকে কোন ভাবে বুঝালাম যে আমার ভাল লাগছিল না তাই আমার বান্ধবীর আম্মুর সাথে চলে এসেছি, কিন্তু পরের দিন কলেজে স্যার আমাকে ধরে বসেছে...বলে পাজী মেয়ে এইভাবে কেন চলে এসেছিলে আমাকেও না জানিয়ে, আমার বাসায় বসে থাকতে পারনি, যদি কিছু হত তাহলে কি হত।আমি আর কি করার চুপচাপ বকা শুনলাম...

অসম্ভব রকমের দূর্দান্ত ছিল সেই দিনগুলি। ফেলে আসা দিনের কথা মনে পড়লে বুকটা মুচড়ে কান্না আসে... হাজার কান্নাকাটি করলেও সেসব দিন আর কখনো ফিরে পাবো না জানি... এখন বৃষ্টি হলেও আর ভিজতে ইচ্ছা করে না। শুধু জানালার ধারে বসে থেকে মুষলধারে বৃষ্টিঝরা দেখি, গান শুনি আর অতীতের মাঝে নিয়ে যাই নিজের ভেতরের অস্তিত্বটা কে....তখন আপন মনে একলাই হাসি।

"আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি
আমায় আর কান্নার ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই...."

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন