এই ব্লগটি সন্ধান করুন

বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন, ২০১২

দিনের পর, দিন আসে,
সমুদ্রেরর গাং চিলেরা,
উড়ে বেড়ায় উপকূলে সীমানায় ।
কোথায় আমার সীমানায়,
তোমায় যে দেখছি না ?

সমুদ্র থেকে ফিরে এসে,
আমি শুধু তোমার তেষ্টায় কাতর ছিলেম,
কোথায় তুমি ?
এই আধারেঁ তোমায় দেখছি না কেন ?

যা হবার তবে কি তাই,
সমুদ্র কি গ্রাস করেছে তোমায় ?
ললাট জুড়ে দুঃখ লিখে,
কোথায়, কোথায় তুমি হারালে ?

সূর্বণ তুমি ফিরে এসো,
ফিরে এসো প্রতিটি হাওয়ার কণায় ভেসে,
আমি তোমাকে আমার,
ফুসফুসে লুকিয়ে রাখব ।
তুমি চলে যেতে পারো না,
তোমার চলে যাওয়া নেই।


ভালবসা এমনই হয়, এমন করে ভালবাসাদের ইচ্ছে করে চলে যেতে দিতে হয় । হয়ত আবেগের মেঘ এসে জড়ো হয়, পুরো আকাশটা জুড়ে। তবুও মাঝে মাঝে নাড়া দেয় প্রচন্ড রকম। কিছু কিছু ভালবাসা খুব নিরবে এপিটাফ হয়ে যায়, কিছু ভালবাসা ছেড়ে যেতে চাইলে নাড়ীর টান মেরে উঠে । ওফ এত যন্ত্রণা, মৃত্যুকে বুঝি হার মানাবে। চোখের জল ঝড়ে ভিজে যায় বালিশ কুশন, নিবর খুব নিরবভাবে প্রস্থান হয় ভালবাসাদের। ভালবসারা বুঝি এমনই হয় নতুবা এত কষ্ট কেন ভালবাসা গুলো ফিরে যেতে।

এ বর্ষায় ধুয়ে যাবে তোমার সিঁদুর
বুনো আর সংগীতা একই ক্লাসে পড়ে, খুব ভাল বন্ধুত্ব ওদের মাঝে । এরি মাঝেই যেন একটা সরল সর্ম্পক গড়ে উঠে তাদের মাঝে । বুনো লেখাপড়ায় মনটা একটু বেশি, নতুন করে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্র রাজনিতীতে । সংগীতা এটা খেয়াল করেছে অনেক আগে থেকেই । অপর দিকে সংগীতাটা কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে বুনোর কাছে, প্রায়ই কারণে অকারণে বড্ড আবদার করে বসে । এটা না আমি ওটা খাবো, না তুমি এখন ওদের সাথে যাবে না, আমাকে বাড়ী ফিরিয়ে দিয়ে এসো। উভয় পরিবার সুশিক্ষিত, মার্জিত, তাই ওরা সরল বন্ধুত্বে প্রকাশ বলে মেনে নেয়। অস্বাভাবিক হলেও একই রক্তে অধিকারী দু’জন দু ধর্মের অনুসারী । প্রথমমত সংগীতার মনে জন্ম নেয় একটা বুনো শৈবাল যাকে আমি বলি প্রেম। কি করে বলবে বুনো আমি তোমাকে ভালবাসি, বাকিটা জীবন তোমার হাত ধরে পার করতে চাই । চলছে চাকা কাটছে সময় এক এক করে প্রায় দু’টো বছর ।

আজ সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে, ভীষণ বৃষ্টি । পাড়ায় একটা ঝামেলা হয়েছে, বুনো সকাল থেকেই ব্যাস্ত, উদ্দেশ্য প্রতিপক্ষকে আক্রমণ, তার যুদ্ধের রস সংগ্রহ নিয়ে ব্যাস্ত। অপরদিকে সংগীতা সকাল থেকে বুনোদের বাসায় এসে বসে অপেক্ষা করছে। ইস বুনোটা যে কি ? কোন খবর নেই । সংগীতার ইচ্ছে করছে বুনোর সব বই পত্র আকাঁ আঁকি করে নষ্ট করতে। আজ যে তার বড় আসার দিন আজ সে পণ করে এসেছে আজ বুনোকে বলবে, অন্তরের সেই গোপন ব্যথ্যার কথা । এখন দুপুর ২টা, অবশেষে বুনোর দেখা পেল, ঘরে ফিরে বুনো পড়ে একটা ঝাপটার মধ্যে, কি এতক্ষণ কোথায় ছিলে, সেই কখন থেকে বসে আচি তোমার জন্য, বুনো স্বাভাবিকভাবে বলে উঠে, তাহলে চলে গেলি না কেন ? অন্য সময় আসলেই পারতি। বুনো কি আর জানে কোন গহীন ব্যাথ্যার ঔষধ নিতে এসেছে।

খুব বৃষ্টি পড়ছে, একবারে মুষুলধারে, দুত্ত এমন সময় বাসা থেকে বের হওয়া উচিত হয়নি । একটা ছাতার নীচে দুজন, বৃষ্টির ধকল সমলাতে আরও কাছে আসা, শরীরে পরম উষ্ণতা যেন বরবরই বাড়ছে। আচছা বুনো একটা কথা বলি, বল । না থাক অন্যদিন বলব , আরে বল না, এমন করার কি আছে, নাড়বি না ভিজে যাচ্ছিতো, শোন তোকে বলা হয়নি, তোকে আমি, থেমে গেলো সংগীতা, কি কি হলো ? সংগীতা টের পাচ্ছে হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে, তোর যদি অসুবিধা না হয় আমি না তোকে ভালোবেসে ফেলেছি, এক নিঃস্বসে বলে ফেলে সংগীতা । বৃষ্টির মাঝে হঠাৎ থেমে যায় ছাতাটি, বুনো যেন আকাশ থেকে পড়ে, যাকে স্রেফ একজন ভাল বন্ধু ভেবে মনের সব কথা বলে ফেলেছে, আজ সে কি বলছে। গলা নামিয়ে বুনো বলতে লাগলো, শোন তুই তো আমার বন্ধু, আমি তোকে ভালো না বেসে পারি । তোর প্রস্তাবটা আমার জন্য খুব আনন্দের কিন্তু দেখ, তুই তোর মায়ের একমাত্র মেয়ে, তোর ছোট একটা ভাই তোকে অনুসরণ করবে, তোর বাবা সমাজের একজন সম্মানিত ব্যাক্তি, তুই কি চাস সারা জীবনের এই সিদ্ধান্তের জন্য সবাই কষ্ট ভোগ করুক, অবশ্যই না, শোন তুই হিন্দু আর আমি মুসলমান আমাদের মাঝে এটুকু শুধু ফারাক নয়, সমাজের সম্মান আর ইজ্জত রক্ষার জন্যই এত লড়াই, এত কষ্ট করে কত কিছু করা । একবার ভেবে দেখ এটায় শুধু তোর আর আমার উপকার, আর পেছনের মানুষ গুলো যন্ত্রণা আর অবজ্ঞা পাবে।
সংগীতার এবার বাস ষ্ট্যান্ড এর কাছাকাছি, সংগীতার নোনা জল বুনোর গায়ে পড়ে যাচ্ছে । এক সময় ফুপিয়ে কাঁধতে থাকে, চলিরে বুনো ভাল থাকিস, এই ট্যাক্সি .... ।

আজ তিনটি বছর পেড়িয়ে গেল, বুনো ভুলে বসে আছে সংগীতাকে, হঠাৎ মফস্বলে ফিরে বাসায় গিয়ে দেখে সংগীতার মান বাসায় উপস্থি, প্রণাম শেষে কুশল বিনিময়, আন্টীকে আজ খুব খুশি খুশি লাগছে, লাগবেই না বা কেন ? সংগীতার বিয়ে নিমন্ত্রণ দিতে এসেছে । পুরো পরিবার জুড়ে একটা আনন্দের ব্যাপার। বন্ধুর বিয়েতে কি কি করা যায়, ভাবতে থাকে বুনো, আর মন থেকে কেমন একটা চাপের অনূভুতি টের পায, টের পাচ্ছে অতীতের প্রেম বুঝি বলছে “বুনো তুমি কি মানুষ, তুমি তোমার সামাজিক অস্তিত্ত্বের জন্য হৃদয়টাকে পোড়চ্ছে কেন ? না ভালো লাগছে, দুত্ত ।

আজ বিয়ের রাত্রি, লগ্ন পড়েছে খুব ভালো সময়ে রাত ১১ টা, বর পক্ষ হাজির বিয়ে হয়ে, যাচ্ছে । সবাই খুব মজা করছে, বুনোর মনটা কেমন জানি হু হু করে উঠলো, অনেক কাছে গিয়ে সে সংগীতার সাথে কথা বলে এসেছে । তাকে খুব স্বাভাবিক লাগছিল, তবে বুনোর কি হলো ? পটকা, পিচ্চিদের হৈ হুলোড়, বিয়ে পর কড়ি খেলা, কিছু থেমে নেই, শুধু থেমে আছে বুনোর জীবন।

চোখের সামনেই এপিটাফ হয়ে গেল ভালবাসাটা, এই চেনা মুখ, এই চেনা গন্ধ,
বুনোর জন্য রেখে গেলো এক ঝাপটা কুয়াশাচ্ছন্ন হাসি ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন