এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শুক্রবার, ১৫ জুন, ২০১২

ঝম ঝম করা বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে আমার। আকাশে বৃষ্টির মাঝেও মেঘ দেখা যাচ্ছে। মনটা একটু ভেজা ভেজা হয়ে যায়......এই মেঘগুলো কেন আমায় উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে না!!! সকাল বেলা ঘুমটা ভাঙ্গে তারপর শুনি মেঘের গুড়্গুড় শব্দ, কেমন জানি গাঢ় সবুজ পাতার বুনো ঘ্রান...আমার সব হয়ে যায় এলোমেলো আর শূন্য।..।।..মনের ফাঁকা ফাঁকা ভাব দূর হয়ে যায়। কেমন যেন একটা অনুভূতি। আজকে অনেকদিন পর ঘুম থেকে উঠে খারাপ লাগছে ...না, বরং মনে হচ্ছে জীবনটা মূল্যবান, বেঁচে থাকা মানে অনেক কিছু…

এমনিতে প্রতিদিন ঘুম ভাঙ্গে এক অদ্ভুত শূন্যতা নিয়ে, চারপাশের সবকিছু অবাস্তব মনে হয়। আচ্ছা দুটি মানুষ পাশাপাশি না থেকেও কিভাবে একসাথে থাকতে পারে। আবার একই ঘরে থেকেও থাকতে পারে আলাদা, বহুদূরে! আমার এখনো বিশ্বাস হয়না ২ মাস হয়ে গেছে অহন কে ফোন করিনা। হয়ত আর করাও হবে নাহ। অজানা কোন নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে হয়তো ওর হ্যালো শুনলে আরো কষ্ট বাড়বে। কিছু বলতে পারব না আমি, ও আর কখনো ভরাট গলায় বলবে না_কেমন আছ ? যে কথাটা ও সব চেয়ে অদ্ভুত সুন্দর করে বলতো।

**
আমাদের সম্পর্কের কোন নাম ছিলনা। একসাথে হাঁটার সময় পথ ফুরিয়ে যেত, কথা শেষ হত না। হয়ত ও আমার থেকে কিছু শুনতে চাইতো। আর আমার চারপাশের এক অভেদ্য দেয়াল আমাকে আটকে রাখতো। আমি আগ বাড়িয়ে কখনও জানতে চাইনি ওর সম্পর্কের কথা। মাঝে মাঝে বুঝতাম ওর ভালোবাসার মেয়েটি আমাকে নিয়ে অহনকে সন্দেহ করছে।একদিন বিকেলে অহনকে ফোন করতেই ওর ফোন মেয়েটি ধরে, তারপর আমাকে যাচ্ছেতাই বলে। কথাগুলো আমার কানে যাচ্ছিলোনা। শুধু চোখে ভাসছিলো অহন মনে হয় ফোনের ওপাশে অনেক ব্যথাতুর দৃষ্টি নিয়ে ওর প্রেমিকাটির দিকে তাকিয়ে আছে।

সেদিন সন্ধ্যার পর আমরা শেষবারের মত মুখমুখি বসেছিলাম। অহন বলেছিল_
-বুলা, আর ফোন দিসনা আমাকে।
আমি ঘাড় নেড়ে হ্যা বললাম।
-অনেক ভাল থাকিস।
আমি আবার মাথা নাড়লাম।
অহনের কালো চোখগুলো যেন আর গভীর কালো হয়েছিল। গলার স্বরটা ছিল আরো ভেজা আরো বেশী ভরাট আর বিষন্ন। আমার চোখে পানি জমতে শুরু করে। আমি অন্যদিকে তাকাই। রাতের আকাশটা আমার অদ্ভুত মায়াময় মনে হয়।

***
পরদিন থেকে আমার সব ওলোট-পালোট হয়ে যায়। সেল ফোনটা অফ করে দেই। একটু নিজের মত থাকতে চেষ্টা করি। কিন্তু কিছুই হয় নাহ।অনেক রাতে ঘুমন্ত আমার গায়ে কেউ চাদর দিয়ে যায়। পড়তে বসার সময় আমার কপালের ওপরের চুলগুলো কেউ সযত্নে সড়িয়ে দেয়। আমার মাইনাস পওয়ারের চশমার কাঁচ কেউ মুছে দেয়। রিকশার একপাশে বসে, পাশের জায়গাটা ফাঁকা রাখতে আমার বড্ড ভাল লাগে।মনে হয় কেউ আছে আমারই পাশে। ভীড়ের মাঝেও নিজেকে একা লাগে আবার একা থেকেও মনে হয় আমি একা নই। খুব বেশী মন খারাপ হলে মনে হয় চারপাশ থেকে জমাট বাঁধা অনেক নীলচে মেঘ আমাকে এসে জড়িয়ে ধরেছে। চা, কফি কেন জানি হাফ খেয়ে আর খাওয়া হয় না।সবসময় নিজেকে লাগে অদ্ভুত এক অপূর্নতায় পূর্ন।

****
ঝন ঝন করে ল্যান্ড ফোনটা বেজেই চলেছে। আমি চমকে যাই। এ সময়তো ফোন আসেনা কখনো। আমার মনে অদ্ভুত এক ভাবনা ঘুরপাক খেতে থাকে। আমি ছুটে যাচ্ছি......

বৃষ্টির পর বাতাসে ভেজামাটির সোঁদা গন্ধ, জানালার পর্দাগুলো ঠান্ডা বাতাসে তিরতির করে কাঁপছে। সবকিছু যেন অসাধারন স্নিগ্ধ হয়ে গেছে হঠাৎ।

......ঝন ঝন করে ফোনটা বেজেই যাচ্ছে......
আরো দেখুন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন